
পদ্মা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন এক বৃদ্ধ কৃষক। হাত তুলে দেখাচ্ছেন কোথায় ছিল তাঁর স্বপ্নের জমি, যেখানে তিনি প্রতিবছর বাদাম, সরিষা আর ধান চাষ করতেন। আজ সেই জমি নেই—নেই তার রংবে রঙের ফসল, নেই জীবিকার অবলম্বন। সবকিছুই গিলে ফেলেছে নদী, আর নদীর পেছনে রয়েছে এক নির্মম, অব্যবস্থাপনার গল্প—অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন।
পাবনার সদর, ঈশ্বরদী ও সুজানগর উপজেলায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে পদ্মা নদীর ভাঙন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার এবং ভ্রাম্যমাণ ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। প্রশাসনের চোখের সামনে দিনের পর দিন চলা এই অপতৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চরাঞ্চলের শত শত বিঘা ফসলি জমি, নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।

ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের নদী রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে। লালনশাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের বিনোদন কেন্দ্র, বাজার, দোকানপাট—সবই পড়েছে বিপদের মধ্যে। সুজানগরের সাতবাড়ীয়া, রায়পুর, উদয়পুর ও নাজিরগঞ্জেও একর পর এক ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের শুষ্ক মৌসুমের কৃষি এখন শুধুই স্মৃতি।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, “আমরা অনেকবার প্রশাসনের কাছে গেছি, কিন্তু কার্যকর কিছু পাইনি। বরং উল্টো হুমকি খাই। আমাদের কণ্ঠ যেন কেউ শুনছে না।”
পাবনা জেলা পুলিশ সুপার আলী মুর্তজা খান এই বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সাংবাদিকদের দোষারোপ করেছেন। তার বক্তব্য, “কিছু সাংবাদিক বালু মহল থেকে টাকা না পেলে আমাদের কাছে আছে বালু মহলের তথ্য সংগ্রহের জন্য। এ সময় তিনি আরো বলেন এটা নৌউ পুলিশের কাজ। আর জেলা প্রশাসন যখন অভিযানে পুলিশ চায় আমি তখন দিয়ে দেই। এ বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই আপনাদের মত করে লিখে নিয়েন।
অপরদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, “মোবাইল কোর্ট পরিচালনার আগেই খবর পৌঁছে যায় বালু দস্যুদের কাছে—এটা খুবই দুঃখজনক।” যখনই বালু মহল বিষয়ে কোন তথ্য পেয়েছি, তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে সেক্ষেত্রে আমার অফিসাররা কাদা মাটি উপেক্ষা করে সফলভাবে সেগুলো করতে সক্ষম হয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি বালু মহল সম্পর্কিত দস্যুদের তৎপরতা বন্ধে।
এই মুহূর্তে চর ভবানীপুর, দড়ি ভাউডাঙ্গি, শুকচর, নগরবাড়ি, চাকলা, পাকশী ও লক্ষ্মীকুণ্ডার মতো অঞ্চলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। নদী হারাচ্ছে তার প্রাণ, কৃষক হারাচ্ছেন জীবিকা।
আজ এই জনপদের কৃষকরা আর শুধু নদীভাঙনের শিকার নন, তারা নিপীড়নের শিকার। তাদের স্বপ্ন ভাঙছে, জমি হারাচ্ছে, অথচ অপরাধীরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
প্রশাসনের কাছে স্থানীয়দের একটাই দাবি ফসলি জমি বাঁচান, পরিবেশ রক্ষা করুন, নদীটাকে বাঁচতে দিন