বাংলাদেশ সব সময়ই বিশ্বের প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত দেশগুলোর অন্যতম। প্রতি বছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঝড়, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
জলবায়ু ও আবহাওয়া বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোরও অন্যতম বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সে লক্ষণ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। আলামত হিসেবে উল্লেখ করা যায়, এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই অসময়ে বন্যাকবলিত হয় সিলেট অঞ্চলসহ দেশের বেশ কিছু জেলা। এতে ওই সব অঞ্চলের মানুষ যেমন অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন, তেমনি বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের অনেক স্থানে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। উপর্যুপরি দুর্ভোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এসব জেলার আশপাশের নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। এই পাঁচ জেলার শত শত গ্রাম এখনই প্লাবিত। ওই সব এলাকার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে বন্যার ব্যাপকতা আরো বাড়তে পারে। বন্যার কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেক জায়গায় খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এদিকে ভারতের গজলডোবা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা অববাহিকার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলেও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। অবস্থা এমন যে, কোথাও কোথাও বাড়িঘরে কোমর পানি উঠেছে।
গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, সিলেট বিভাগের বন্যা দেশের আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এই বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বাকি তিন জেলার শহরের কিছু উঁচু স্থান, পাহাড়ি এলাকা এবং ভবন ছাড়া সবখানে এখন পানি। আগামী-এক দুই দিনে এই পানি আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
সিলেট মহানগরীর বহু বাসাবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর আগে ১৪ মে থেকে সিলেট মহানগরীসহ ১৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। দ্বিতীয় দফার বন্যায় ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখো পানিবন্দী মানুষ। সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা বন্যাকবলিত। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদর কিংবা জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের অনেক স্থান ডুবে গেছে। অন্যদিকে বন্যার পানিতে ডুবে জামালপুরে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ জেলার নদীতীরবর্তী এলাকায় বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষেত ও বীজতলা প্লাবিত হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। তলিয়ে গেছে উঠতি ফসল। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় মানুষজনের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। খাবার পানিসহ খাদ্যসঙ্কটে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্গত মানুষের কাছে এখনো পৌঁছেনি সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা। গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, কোনো ত্রাণসামগ্রী না পৌঁছানোয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অসহায় বোধ করছেন। তারা এলাকার মানুষজনকে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারছেন না।
আমরা মনে করি, মানুষ মানুষের জন্য- এই মানসিকতা জাগ্রত হোক সবার মাঝে। যে কারো বিপদে এগিয়ে যাওয়াই মানবতা। তাই অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই আমরা।