• Sun. Dec 22nd, 2024

দৈনিক পাবনার আলো, মাহফুজ আলী কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত

#pabnaralo#, pabna# pabnanews# পাবনারআলো# পাবনার_আলো#পাবনারখবর#পাবনারবার্তা

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ী সংস্কারের উদ্যোগ জেলা প্রশাসনের

পাবনা অফিস
উপ-মহাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য রোববার বিকেল ৫টায় পাবনার জেলা প্রশাসক মু.আসাদুজ্জামান শহরের হেমসাগর লেনে অবস্থিত সুচিত্রা সেনের বাড়ী পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের নেতবৃন্দের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।
পাবনার জেলা প্রশাসনক মু. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্ব সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরীফ আহম্মেদ, সুচিত্রা সেন স¥ৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য এবিএম ফজলুর রহমান, এনডিসি মোহাম্মহদ আবুল হাসানাত, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ চন্দ্র মধু, সহকারী কমিশনার মো: মনিরুল ইসলাম, পরিষদের নির্বাহী সদস্য মাজাহরুল ইসলাম ও সদস্য আবুল কালাম আজাদ।
সুচিত্রা সেনের বাড়ীতে কিভাবে সংগ্রহশালা হিসেবে আরও সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সরকারের কাছে সংগ্রহশালা করার যে প্রস্তাব রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা হয়। বাড়িটিকে ঠিক রেখে বর্তমানে সংস্কারের জন্য এনডিসি মোহাম্মহদ আবুল হাছানাত এবং পরিষদের পক্ষ থেকে ড. নরেশ মধুকে সহযোগিতার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়।
মতবিনিময় সভায় বক্তরা বলেন, প্রতিদিনই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অসংখ্য দর্শানার্থী বাড়িটি দেখার জন্য আসেন। বাড়িটির প্রতি সংস্কৃতি প্রেমীদের গভীর ভালবাসা ও আবেগ রয়েছে। সুতরাং বাড়িটিকে সুন্দর দর্শনীয় রাখার প্রতি নজড় দেয়া প্রয়োজন।  
জেলা প্রশাসক মহোদয় বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং করনীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন। এ সময় ড. নরেশ মধু সুচিত্রা সেন কন্যা মুনমুন সেনের সাথে জেলা প্রশাসকের মতাবিনিময় করার সংযোগ স্থাপন করে দেন। পরস্পর মতবিনিময় করেন এবং জেলা প্রশসাক মুনমুন সেনকে পাবনায় তার পৈতিৃক বাড়ি দেখার জন্য আমান্ত্রণ জানান।
সংশিষ্ট সুত্রে জানা জায়, ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলার হেমসাগর লেনের এই বাড়ীতে জন্ম গ্রহণ করেন এই দীপ্তিময় প্রতিভা। নয় ভাইবোনের মধ্যে সুচিত্রা ছিলেন পঞ্চম। বাড়ির ছোটরা ডাকতেন রাঙাদি বলে। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন রমা। পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারী নীতীশ রায় তা বদলে রাখেন সুচিত্রা। কিন্তু পাবনার মহাকালী পাঠশালায় খাতায় কলমে তাঁর নাম ছিল কৃষ্ণা দাশগুপ্ত।
পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুনাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পদে চাকুরী করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিনী। দু’বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। ছোট বোন হেনা দাশগুপ্ত। শহরের মহাকালী পাঠশালায় পড়ালেখা শেষ করে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগী ও মেধাবী না থাকলেও গান, নাটক, অভিনয় প্রিয় ও পছন্দের ছিল সূচিত্রা সেনের। পাবনা শহরের নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে তিনি অভিনয়ে দক্ষতা দেখান।
উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া সুচিত্রা সেন ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের ক’মাস আগে বাবা করুণাময় দাসগুপ্ত পাবনার বাড়ি-ঘর, চাকুরী সবকিছু ফেলে স্বপরিবারে ভারত চলে যান। কলকাতা যাবার বছর দু’য়েক পরেই সেখানকার বনেদি পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সাথে রমাদাশগুপ্তের বিয়ের পর নাম হয় সুচিত্রা সেন। আর বিয়ের পর স্বামীর পদবীতে রমাদাশগুপ্ত হয়ে যান রমা সেন। সুচিত্রা সেনের স্বামী দিবানাথ সেনের পূর্ব পুরুষদের বাড়ি ছিল বাংলাদেশেরই দক্ষিণ অঞ্চলে।
বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে “শেষ কোথায়” নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। অজ্ঞাত কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি “সাত নম্বর কয়েদি” ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। স্বামী দিবানাথ সেনের প্রবল আপত্তি থাকলেও সুচিত্রা সেন মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন। ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবির পরিচালক ছিলেন সুকুমার দাশগুপ্ত। তারই একজন সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় এ ছবিতে অভিনয় করার পর ছবি মুক্তির সময় রমা নাম বদলে নাম দেন ‘সুচিত্রা সেন’। এরপর থেকেই কিশোরী বেলার বান্ধবিদের রমা বাবা-মায়ের দেওয়া নাম রমা দাশগুপ্ত থেকে স্বামীর পদবী নিয়ে রমা সেন সবশেষে স্বপ্নসুন্দরী সুচিত্রা সেন হয়ে যান। সুচিত্রা সেন বাংলা ৫৬টি ও ৭টি হিন্দি মিলে মোট ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ১৯৭৮ সালে উত্তম কুমার মারা গেলে সিনেমায় অভিনয় বন্ধ করে দেন।
১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেষ্ট অ্যাকট্রেস জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকারও তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেন। ২০০৫ সালে তাঁকে দাদা সাহেব ফলকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহন করেননি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্Ÿোচ্চ সম্মান বঙ্গবিভূষণ দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি দেবদাস ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন, যা ছিলো তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কোলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

এবিএম ফজলুর রহমান
স্টাফ রির্পোটার, পাবনা অফিস
০৬ নভেম্বর, ২০২৩ ইং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *