
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, অবৈধ দখলদার, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সদা তৎপর রয়েছে র্যাব।
গত ০৪ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে পাবনায় কোটা সংস্কার নিয়ে চলমান শান্তিপূর্ণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দুর্বৃত্তরা আগ্নেয়াস্ত্রসহ হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলে দুই জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। নিহতরা হলেন পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৮), পিতা-মোঃ দুলাল উদ্দিন মাষ্টার, গ্রাম-বলরামপুর, এবং সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহবুব হাসান নিলয় (১৪), পিতা-আবুল কালাম, গ্রাম-ব্রজনাথপুর, উভয় থানা-পাবনা সদর, জেলা-পাবনা। মেধাবী শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় নিহত জাহিদুল ইসলামের পিতা মোঃ দুলাল উদ্দিন মাষ্টার বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

এছাড়াও ঘটনাস্থলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকৃত শিক্ষার্থী ১। সাজ্জাদ হোসেন অনিক (২৩), পিতা-মোঃ রবিউল ইসলাম , সাং-রাধানগর, ২। মনা (২৮), পিতা-নুর ইসলাম, সাং-চর সাধুপাড়া, ৩। স্পর্শ (২৪), পিতা-আলম, সাং-সাধুপাড়া, সর্ব থানা- পাবনা, জেলা-পাবনাসহ ০৭ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ও মারপিটে গুরুতরভাবে আহত হওয়ায় গত ৩০ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে পাবনা সদর থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়।
৪। উক্ত বৈপ্লবিক আন্দোলনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত এ হামলায় ০২ শিক্ষার্থী নিহত এবং অনেক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশ জুড়ে ব্যাপক নেতিবাচক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নিরস্ত্র ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে প্রকাশ্য দিবালোকে ভয়ংকর আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। উক্ত ঘটনার পর পরই সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে মাঠে নামে পাবনা র্যাবের গোয়েন্দা টিম। ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি টিভি ফুটেজ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও সংরক্ষণের মাধ্যমে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয় এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের জন্য তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সর্বাত্মক অভিযান শুরু হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখ ১৫.০৫ ঘটিকায় র্যাব-১২, সিপিসি-২, পাবনা কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোঃ এহতেশামুল হক খান এবং র্যাব-৩, সিপিসি-২, মগবাজার, ঢাকা কোম্পানি কমান্ডার লেঃ কমাঃ তানভীর আহমেদ ইমন ও স্কোয়াড কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান এর নেতৃত্বে র্যাবের একটি যৌথ আভিযানিক দল র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর, ইন্ট উইং, ঢাকা এর সহায়তায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিতিত্তে ‘ঢাকা মহানগরীর লালবাগ থানাধীন হাজারীবাগ এলাকায়’ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে ভিডিও ফুটেজে সনাক্তকৃত কিলিং মিশনে সরাসরি জড়িত এজাহারনামীয় ০৮ নং পলাতক আসামী মোঃ নাছির ওরফে নাফির (৩০), পিতা-মোঃ মুক্তার ভান্ডারী, সাং-নলদহ, থানা-পাবনা সদর, জেলা-পাবনাকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে এবং ভিডিও ফুটেজে নিজেকে সনাক্ত করে। এছাড়াও র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামী নাছির উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য সন্ত্রাসীদের সম্পর্কেও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতারকৃত আসামী নাছির ওরফে নাফির এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে সাথে নিয়ে অদ্য ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখ ভোর ০৫.৩০ ঘটিকায় অভিযান পরিচালনা করে ০১টি রিভলবার ও ০৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য সন্ত্রাসীসহ মদদ দাতাদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান চলমান থাকবে।
গ্রেফতারকৃত আসামী নাছিরকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থার জন্য পাবনা জেলার সদর থানায় হস্তান্তর করা হবে।