• Fri. Nov 22nd, 2024

দৈনিক পাবনার আলো, মাহফুজ আলী কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত

#pabnaralo#, pabna# pabnanews# পাবনারআলো# পাবনার_আলো#পাবনারখবর#পাবনারবার্তা

ভুমধ্যসাগরের তলদেশে আবিষ্কৃত রহস্যজনক পৃথিবীর এক বাসিন্দার গল্প!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ লরেন্ট বেলেস্তা একজন মেরিন বায়োলজিস্ট (সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী) এবং পানির তলদেশের একজন ফটোগ্রাফার। যার যুগান্তকারী পদ্ধতির সাহায্যে ভুমধ্যসাগরের তলদেশের লুকায়িত বিস্ময়কর জগতের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমুদ্র তলদেশে ঘুরে বেড়িয়েছি এবং সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছি ভুমধ্যসাগরের তলদেশে। আমি এমন জিনিসও সেখানে দেখেছি যা আমার কল্পনাতেও কখনও আসেনি। এতগুলো বছরে আমি একটা জিনিস শিখেছি, সাগরের গভীর থেকে গভীরতম অঞ্চলে মানুষের ক্ষতিকর স্পর্শ থেকে দূরে আরেকটি বিশাল জগত বা পৃথিবী আছে। আমি এটাকে বলি ভুমধ্যসাগরীয় পৃথিবী। চলুন দেখে নেয়া লরেন্টের চোখে দেখা ভুমধ্যসাগরের সেই লুকায়িত বিস্ময়কর জগত।
আমি জানি আপনি যা দেখতে পারছেন না সেটি সম্পর্কে ধারণা করা বা সেটি উপভোগ করা খুব কঠিন। সুতরাং কীভাবে আমি আপনাদের ভুমধ্যসাগরের তলদেশের সেই বিস্ময়কর জগতটা দেখাবো? না, এটা ক্যারিবীয় অঞ্চলের কোনো সাগর নয় বা সাগরের কোনো প্রবাল দেয়ালও নয়। পানির তলদেশের এই বিস্ময়কর বাগান জন্মে কেবল ভুমধ্যসাগরে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১২০ মিটার নীচের এই জগতটি যেমন দেখায় সেটি আসলে মোটেও তেমন নয়। যখন আপনি সমুদ্রের গভীরে যাবেন তখন ছোট ছোট প্রাণীগুলোও বৃহৎ আকার ধারণ করবে। ব্ল্যাক কোরাল (কালো প্রবাল) আসলে কালো নয়। ফুলগুলোও আসলে কীট-পতঙ্গ এবং কাল্পনিক সব প্রাণীগুলো যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এসব কিছুই আপনাকে দেখিয়ে দেবে যে, এখনও আপনি অনেক কিছুই জানেন না। আমি যদি আমার যৌবনকালের কথা স্মরণ করি, কোনো ভাষাই সেটাকে প্রকাশ করতে পারবো না। আমার বাবা-মা ও বন্ধুরা আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করতো,সত্যিই! তুমি কি সত্যিই সাগরের তলদেশে এটা ওটা দেখেছো? ওই

সময়ই আমি অনুভব করেছি সাগরের তলদেশে আমি যা দেখছি সেগুলো তাদেরকেও দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে এটা বোঝানো যে, সাগর-মহাসাগর একটি আলাদা পৃথিবী। সমুদ্রের গভীরে ডাইভ দেয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পানির চাপ সহ্য করার প্রক্রিয়া (ডিকপ্রেশন হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া যেভাবে একজন ডাইভার সমুদ্র তলদেশ থেকে ধাপে ধাপে উপরে উঠে আসেন)। যেমন, ১২০ মিটার নীচে যদি আপনি আধা ঘণ্টা কাটান তাহলে ধীরে ধীরে কয়েকটি ধাপে উপরে ওঠতে আপনার কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। উপরে ওঠাই যদি একজন ডাইভারের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে এর সমাধান হচ্ছে উপরে আর না ওঠা। অথবা আপনার শরীরকে এটা বোঝানো যে, উপরে আর ওঠার দরকার নেই। এবং আমরা সেটাই করেছি সমুদ্র তলদেশের গভীরে স্টেশন বানিয়ে।
২০১৯ সালের গ্রীষ্মে আরও ৩ জন ডাইভারের সাথে মিলে আমরা ভুমধ্যসাগরের তলদেশের রহস্য উদ্ঘাটনে স্বেচ্ছায় লকডাউনে যাই এবং আমরা সেখানে ২৮ দিন কাটাই। প্রায় ১০০ মিটার নীচের স্টেশনের সাহায্যে আমরা ডাইভ দেই। গভীর সমুদ্রের নীচের এই স্টেশন সাগরের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেছে। ডিকপ্রেশন কেবল অভিযান শেষে একবারই করতে হতো অর্থাৎ একটি ধাপেই গভীর তলদেশ থেকে পানির নীচের সেই স্টেশনে উঠে আসার প্রক্রিয়া শেষ হতো। মেরিন ইকোলজিস্ট ফ্লোরিন হোলন বলেন, গভীর পানির নীচের এই স্টেশন সমুদ্র তলদেশ অভিযানে আমাদের জন্য নতুন দরজা খুলে দিয়েছে।

সমুদ্রের নীচে একটি বিশেষ ইকোসিস্টেম (বাস্তুতন্ত্র) চালু আছে যেখানে আছে শৈবাল জাতীয় পাথরের জগত যা কেবল গভীর সমুদ্রে বেঁচে থাকে।
এই পানির নীচের ডিপ স্টেশনের কারণে সেখানে অভিযান চালাতে আর ছয় ঘণ্টার ডিকপ্রেশন প্রয়োজন হচ্ছে না। এই ডিকপ্রেশনই গভীর সমুদ্র অধ্যায়নে সবচেয়ে বড় সমস্যা। ডিপ স্টেশনের সাহায্যে এর পরিবর্তে আপনি ছয় ঘণ্টা পানির নীচে থেকে ভুমধ্যসাগরের তলদেশের বাস্তুতন্ত্র গবেষণা করে কাটাতে পারেন। এটা সহজ ছিল না। আমরা সেখানে শক্তিশালী ঢেউয়ের সাথে নিয়মিত সংগ্রাম করে দিন কাটিয়েছিলাম। গভীর সমুদ্রের বরফ শীতল আবহাওয়ায় ডাইভিং বেলের ভেতর ছিল অসহনীয় গরম। বাইরে ছিল উন্মত্ত ঠেউ আর ভেতরে নিষ্ক্রিয়তা। ঝিমঝিম মাথা ব্যথা থেকে শুরু করে অবরুদ্ধ পরিবেশে আটকে পড়ার আতঙ্ক সবকিছু সেখানে বিরাজ করছিল। আমি বেশ কয়েকটি কারণে ভুমধ্যসাগরকে বাছাই করেছি।
প্রথমত এটা আমার সমুদ্র যেটি আমি সবচেয়ে ভালো চিনি। এছাড়া ভুমধ্যসাগর সম্পর্কে সচরাচর যা বলা হয় সে সম্পর্কে আমি চরম বিরক্ত ছিলাম। যেমন, এটা হচ্ছে একটা ময়লা ফেলার স্থান যেটি বিশ্বের সবচেয়ে দুষিত সাগর। হ্যাঁ, ভুমধ্যসাগর দূষিত। অবশ্যই এখানে অতিরিক্ত মাছ আছে। হ্যাঁ, এখানে অনেক বেশি প্লাস্টিক আছে। তবে এর মানে এই নয় যে, ভুমধ্যসাগর মারা গেছে। আনুমানিক ১৭ হাজার প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর বসবাস ভুমধ্যসাগরে। সেখানে এমন অনেক প্রাণী যেগুলো আমাদের কল্পনারও বাইরে।

যেমন তামার রঙের কর্ড ফিশ। এগুলো আসলে বিরল বা দুর্লভ নয়, এদের জগতের কাছে পৌঁছাই আমাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। একই কথা প্যারট মাছের ক্ষেত্রেও, অথবা এই স্কুইড যেটিকে আমরা সঙ্গীর সাথে সময় কাটাতে দেখেছিলাম। আমাদের চোখের বাইরের এই জগতে জীবন এখানে অনেক রঙিন ও আনন্দদায়ক।
এই ইকোসিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ কেননা এগুলো ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে। গভীর সমুদ্রে অনেক রকমের ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসংস্থান রয়েছে যেখানে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ। এগুলো নিয়ে অধ্যায়নও বেশ কষ্টসাধ্য। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা দেখেছি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দূষণ প্রাণীদের জগতকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ইতোমধ্যেই অনেক ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমি দেখিয়ে দিয়েছি সেখানে এখনও অনেক জীবন ও প্রাণীদের জগত রয়েছে যা আবিষ্কৃত হয়নি। সেখানে প্রাণীদের অনেক জগত আছে যা উপভোগ করা যায়।
সবচেয়ে সুন্দর যুদ্ধ কোনটি জানেন? যেই যুদ্ধে আপনি হেরে গেছেন বলে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাত্র ৩০ জনের একটি দল আর ৪ জন ডাইভার এবং গভীর সমুদ্রের একটি ডিপ স্টেশনের সাহায্যে মাত্র ২৮ দিনে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে, এখনও সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। আমার কাছে এসবের কোনো জবাব নেই। আমি তাই জানি যা আমি দেখেছি। আর আমার তোলা ছবি দেখে অন্তত আপনিও আর বলতে পারবেন না যে, আপনি এসব দেখেননি। এখন এই জগত সম্পর্কে আপনিও জানেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *