শেষ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ানোই হলো। প্রতি ঘনমিটারে ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১ টাকা ৯১ পয়সা। ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির হার ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আবাসিকে এক চুলার গ্যাসের দাম ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলার গ্যাসের দাম ১ হাজার ৮০ টাকা করা হয়েছে। আর প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ টাকা। এতে এই শ্রেণির গ্রাহকদের মাসে খরচ বাড়বে প্রায় ৪৩ শতাংশ। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে শুধু বাসাবাড়ির রান্নার খরচ বাড়বে না, বাড়বে সার কারখানা ও শিল্পের উৎপাদন খরচও। গ্যাসের এই নতুন দাম ১ জুন থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।
গাসের দাম বৃদ্ধির কারণে সব শ্রেণির গ্রাহকই চাপে পড়বেন। বস্তুত এ সময় গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে মনে করি আমরা। দেশে বেশকিছু দিন ধরে দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বাড়ছে। এরই মধ্যে কিছুদিন আগে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাড়ছে খাদ্যশস্যের দাম। নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি আরও প্রকট হবে। কারণ গ্যাসের দাম বাড়লে গ্যাসনির্ভর শিল্পগুলোর ব্যয় বেড়ে যাবে।
অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে জ্বালানির (গ্যাস) দাম বাড়ায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে অনিবার্যভাবেই বাড়বে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। সবকিছু মিলে দ্রব্যমূল্য আরও বাড়বে। এতে একদিকে বাড়বে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, অন্যদিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো হারাবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর ফলে করোনা মহামারির অভিঘাত থেকে দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ব্যাহত হবে। আমরা জানি, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ কাজ বা চাকরি হারিয়েছে। ছোট ও মাঝারি অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই এ সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি বলে মনে করি আমরা।
তবে পাইকারি পর্যায়ে যেহেতু গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এখনো আসেনি, সেহেতু আমরা আশা করব এক্ষেত্রে সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে। কারণ পাইকারি গ্যাস সব ধরনের শিল্পকারখানা ব্যবহার করে। অন্যদিকে ঘন ঘন গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে এ ব্যাপারে সরকারের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেওয়া উচিত। গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে এ খাতের সিস্টেম লস দূর করার বিষয়ে মনোনিবেশ করা উচিত। তাহলে এ খাতের অপচয় দূর হবে।
এ বিষয়ে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, গ্যাসের চুরি কমানো গেলে দৈনিক ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি কম আমদানি করলেও হতো। চুরি কমানো, উৎস ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হলে ভর্তুকি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। দাম বাড়াতে হবে না। ঘন ঘন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে সরকার অপচয় রোধে দৃষ্টি দেবে-এটাই কাম্য।