মোঃ সিয়াম ঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন পাবনার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের মূল ফটকের সামনে তারা সমবেত হন। পরে দুপুর ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাফিক মোড় গোল চত্বরে সামনে এসে হাজারো শিক্ষার্থী অবস্থাান করেন। সেখানে ‘ছাত্র-জনতার দফা এক দাবি এক, স্বৈরাচারীর পদত্যাগ’, ‘আমার ভাই জেলে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘স্বৈরাচারীর গদিতে, আগুন লাগাও এক সাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থী। এবং শিক্ষার্থীরা ১৫ টি নির্দেশনা দেন তা হলো ১. কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না।
২. বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।
৩. সব ধরনের সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
৫. প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন না। ৬. সব ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন। ৭. বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দিবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না। ৮. দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাই বোনেরা কাজে যাবেন না।
৯. গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না। ১০. জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে।
১১. পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতিত কোনো ধরনের প্রটোকল, রায়ট ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধুমাত্র থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।
১২. দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে। ১৩. বিজিবি ও নৌ-বাহিনী ব্যতিত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌ-বাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে। ১৪. আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না।১৫. বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো-রুম, বিপনি-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। এ সময় পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদ্যস্যরা সতর্ক অবস্থাানে ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই বিক্ষোভ মিছিলে কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীরা মাইকে ন্যায়সঙ্গত এই আন্দোলনে সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। শহরে বেশ কিছু সময় অবস্থাান করে দুপুর দেড়টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আবারও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের মূল ফটকের সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থাান করে শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে কর্মসূচি সমাপ্তি ঘোষণা করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়করা। এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে পাবনা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থাান কর্মসূচি পালন করেন। পরে কলেজের গেটে আবার ফিরে যান। যেহেতু এখানের শিক্ষার্থীরা শান্ত ছিল সেজন্য পুলিশও শান্ত ছিল। খারাপ পরিস্থিাতি তৈরি হয়নি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ কাজ করেছে।