• Thu. Nov 21st, 2024

দৈনিক পাবনার আলো, মাহফুজ আলী কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত

#pabnaralo#, pabna# pabnanews# পাবনারআলো# পাবনার_আলো#পাবনারখবর#পাবনারবার্তা

‘সুরের ধারা’র ছাড়পত্র বাতিল করল রাজউক

নিউজ ডেস্ক পাবনার আলো

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার ও তার কার্যালয়ের প্রভাব খাটিয়ে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন রামচন্দ্রপুর খালের জমিকে ভিটি জমি দেখিয়ে ৯৯ বছরের জন্য তা বরাদ্দ নেন সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সেখানে গড়ে তোলেন ‘সুরের ধারা’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জায়গাটি দখলে রাখতে ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে একটি আধাপাকা স্থাপনার উদ্বোধনও করা হয়। এরপর স্টিলের সীমানা বেষ্টনী দিয়ে একটি সাইনবোর্ডও স্থাপন করা হয়। এর আগে এই জায়গাটি ট্রাকস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে বানানো হয় সুরের ধারা গানের স্কুল। বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীর এমন উদ্যোগে হতবাক হয়েছিলেন পরিবেশবিদসহ অনেকেই।

খালের জায়গা এক দখলদার সরিয়ে অন্যজন দখল করবেনÑ এটা কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়। কিন্তু এর মধ্যেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে দ্রুত সেখানে একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করে সুরের ধারা কর্তৃপক্ষ। এ জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের বিষয়টি যখন জানাজানি হয়ে যায়, তখন এতে বাধ সাধে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। খালের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য সুরের ধারা কর্তৃপক্ষ যে আবেদন করেছে, সেটি অধিকতর যাচাই-বাছাই করার জন্য তারা রাজউককে চিঠি দেয়। দৈনিক আমাদের সময়েও ‘খালের জায়গা নাল দেখিয়ে গড়ে উঠেছে সুরের ধারা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসে রাজউক। অবশেষে বহুতল ভবন নির্মাণ ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র বাতিল করেছে রাজউক।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সুরের ধারার সীমানা বেষ্টনী ভেঙে সেখানে আবার ট্রাকস্ট্যান্ড স্থাপন করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, এখন সেখানে কয়েকশ ট্রাক রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বন্ধ রয়েছে সুরের ধারা গানের স্কুলের স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম।

সুরের ধারার ছাড়পত্র বাতিলের বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনা শাখা থেকে জানা গেছে, যেহেতু ৭ তলার উপরে ভবনটি হওয়ার কথা ছিল। তাই বিধি অনুযায়ী এটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় অনুমোদন পাওয়ার কথা ছিল। বিশেষ প্রকল্পের জন্য রাজউকে একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে ছাড়পত্র অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, খালের প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং মালিকানা-সংক্রান্ত জটিলতা উদ্ভব হওয়ায় ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে।

সুরের ধারাকে যে জমিটি বরাদ্দ দেওয়া হয়, পাঁচ-ছয় বছর আগেও সেখানে কাগজে-কলমে ছিল খাল। সেই জমি ভিটা হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন (ডিসি অফিস)। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারি সম্পত্তি বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী ৯৯ বছরের জন্য বরাদ্দও দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত সেই জায়গায় গড়ে ওঠে গানের স্কুল সুরের ধারা। সেই স্কুলের উদ্বোধনে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি, ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান ও ব্যবসায়ী শাহিনুজ্জামান প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ সরকারের এত হেভিওয়েট মন্ত্রী, এমপিদের উপস্থিতিতে উদ্বোধন হওয়ায় কোনো সংস্থা বা কর্তৃপক্ষই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি। চুপ ছিল রাজউকও। উল্টো তড়িঘড়ি বিশেষ প্রকল্প পাশস করার উপায় খোঁজে। কিন্তু সরকার পতনের পর সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলেছেন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নামে বরাদ্দকৃত এ জমির পরিমাণ ১১০ শতাংশ। ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিএস/এসএ খতিয়ান নম্বর ১-এর ৬৯২ দাগ, আরএস জরিপের ১ নম্বর খতিয়ানের ১৮৯৫ নম্বর দাগ এবং সিটি জরিপের ১ নম্বর খতিয়ানের ১১৪১২ নম্বর দাগের ওপর নির্মিত হয়েছে সুরের ধারা স্কুলটি। ডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিটি জরিপের পর খালের ওই জায়গা নাল হিসেবে দেখানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *