আব্দুল হামিদ খান
সকল পাপের জননী হচ্ছে মিথ্যা বলা। জাতি ধর্ম বর্ণ
নির্বিশেষে মিথ্যা হচ্ছে সকল পাপের মূল। মিথ্যা বর্জন
অনেক অপরাধের নির্মূল করতে পারে। সমাজের অসংখ্য
প্রবণতার মূল উৎস এই হচ্ছে মিথ্যা চর্চা। মিথ্যা
অপরাধীর অপরাধকে প্রকাশ হয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করবে,
প্রতিটি অপরাধী এমন আশা মনে পোষণ করেই অপরাধ
সংঘটিত করে। হত্যাকারী, ঘুষখোর, অপহরণকারী এসব
অপরাধী মিথ্যার প্রশ্রয় পাবে, মিথ্যা বলে তাদের এই অপরাধ
ধামাচাপা দিতে পারবে; মিথ্যার প্রতি এতটুকু আস্থা
যদি না থাকতো তাহলে কোন প্রকার অপরাধ সংঘটিত
হতো না। তাহলে মূলত মিথ্যাই সকল অপরাধের ইন্ধন
যোগায়। সিয়াম সাধনা তাই কঠোরভাবে মিথ্যাকে দমন
করেছে। এমনকি সিয়ামের অস্তিত্বও এসব মিথ্যা কাজ ও
কথা পরিত্যাগের উপর নির্ভরশীল, হাদীসে সে সম্পর্কে
জোর বর্ণনা রয়েছে। প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর
ভাষায় ঃ “ যে মিথ্যা কথা ও সে অনুযায়ী কাজ পরিত্যাগ
করতে পারল না; অযথা খাদ্য ও পানীয় পরিহার করে তার কোন লাভ
নেই।” অর্থাৎ তার এই উপবাস সিয়াম বলে বিবেচিত
হবে না। তাহলে সিয়াম পালনকারীর জন্য মিথ্যা লালনের
সামান্যতম সুযোগও নেই। এ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে,
মিথ্যাকে বর্জন ও সত্যকে লালন এই প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে
সিয়াম এক শক্ত ভূমিকা পালন করছে। প্রবাদ আছে “ অলস
মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা।” অলস সময় মানুষকে অপরাধ
চিন্তা ও পরে অপরাধ সংঘটিত করতে সহায়তা করে।
কর্মব্যস্ততা বেশি থাকলে এ সমস্ত চিন্তা করার কোন
সুযোগ থাকে না। সিয়াম পালনকারীর নিজস্ব কাজকর্ম
তো আছেই, এরপরেও ইফতার, ইফতার পরবর্তী মাগরিবের
সালাত, তারাবীহ্ধসঢ়;, তাহাজ্জুদ, সাহ্ধসঢ়;রী খাওয়ার জন্য তৎপর
হওয়া ব্যাতীত একজন সিয়াম পালনকারীর জন্য গত্যন্তর থাকে
না। অপরদিকে সিয়াম এই রমজান মাসে বেশি পূণ্য
সঞ্চয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তাকে আরো কর্মচঞ্চল করে
তোলে। অপরাধ প্রবণতার চিন্তাটি পর্যন্ত করার ফুসরত
থাকে না। সুতরাং সিয়াম পালনকারীকে কর্মতৎপর করে
গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সিয়ামের এ প্রশিক্ষণ দান মূলত
অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সিয়ামের এক বলিষ্ঠ
পদক্ষেপ। তাই এ কথা বলা যায় যে, অপরাধমুক্ত সমাজ
প্রতিষ্ঠার জন্য যে সমস্ত গুণ, প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন প্রয়োজন
সিয়ামই হচ্ছে এগুলো প্রশিক্ষণের এক বলিষ্ঠ প্রয়াস।
বাস্তবে সকল অপরাধই আমাদের গোটা সমাজকে আচ্ছন্ন
করে রেখেছে। এমন কোন অপরাধ নেই যা আমাদের সমাজে
বর্তমান নেই। প্রতিবছর একমাস ধরে অপরাধ মুক্তির
অন্যতম অনুশীলন সিয়াম সাধনার পরেও এ সমাজ অপরাধমুক্ত
কেন হচ্ছে না, তা আজ চিন্তার বিষয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে
এটি ব্যর্থতা মনে হলেও আসলে এই ব্যর্থতা সিয়ামের নয়।
বরং যে সমাজে এই সিয়াম পালন করা হয় এই ব্যর্থতা
সেই সমাজের। বিষয়টিকে এভাবে বলা যায়, ফুলে-ফলে
সুশোভিত করার জন্য কোন জনপদে বৃষ্টি বর্ষণ হয় , উক্ত
জনপদের কৃষকগণ ওই বৃষ্টির পানিকে সঠিকভাবে কাজে
না লাগালে কাঙ্খিত ফসল উৎপাদিত হবে না। এক্ষেত্রে
আশানুরুপ ফসল উৎপাদন না হওয়ার জন্য দায়ী কি ওই বৃষ্টি
না ওই এলাকার ফসল উৎপাদনকারীরা ? বিষয়টি ঠিক তেমনি,
সমাজকে অপরাধমুক্ত করার জন্য সিয়াম যেভাবে পালন করার
প্রয়োজন ছিল সেভাবে পালন না করার কারণেই সমাজ
থেকে অপরাধ বিলুপ্ত হচ্ছে না। আর অপরাধ বিলুপ্ত না হওয়ার
জন্য দায় সিয়ামের নয়। এ দায়ভার সমাজের। সিয়াম পালনের
সময় নিজে আকণ্ঠ অপরাধে নিমজ্জিত থেকে অপরাধমুক্ত
প্রবণতা দমনের ক্ষেত্রে নিজেকে ব্যর্থ প্রমাণ করলে সে
কখনও কামিয়াবী হতে পারবে না। আমাদের গোটা সমাজের
সিয়াম পালনের বাস্তব অবস্থা এমনই। তাহলে কিভাবে সমাজ
অপরাধমুক্ত হবে ? নিজে সকল অপরাধের হোতা হয়ে
সমাজকে অপরাধমুক্ত করার চেষ্টা অবান্তর নয় কি ?