ডেস্ক নিউজ ॥ সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকবহির্ভূত খাতের বদলে বিদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে ৩ বছর বেশি নেবে সরকার। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণের চাপ কমানো হবে। ইতোমধ্যে আগামী ৩ বছরে বাজেটের ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই সময়ে মোট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা, যেখানে বিদেশি ঋণ নিয়ে ঘাটতির সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ পূরণ করা হবে। তার মধ্যে আগামী অর্থবছরে নেয়া হবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা (ঘাটতির ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ)। তার পরবর্তী বছরে (২০২৩-২৪) নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১১ হাজার ২০৭ কোটি টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১৪০ কোটি টাকা (ঘাটতির ৪৫ শতাংশ)। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার মূলত দুটি কারণে বিদেশ থেকে বেশি ঋণ নেয়ার কৌশল নিয়েছে। প্রথমত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিস বা স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসবে। ওই সময় বিদেশি ঋণের সুদহার ১ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হবে, যা বর্তমানে দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে আছে। সেক্ষেত্রে সুদ ব্যয় বৃদ্ধির আগে বেশিমাত্রায় ঋণ গ্রহণ করতে চায় সরকার। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- অভ্যন্তরীণ ঋণে চাপ কমলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক ঋণের সঙ্কটে পড়বে না। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশির কারণে ওই খাতে সুদ ব্যয়ও বেশি। আগামী দিনে তাও কমে আসবে। ঋণ গ্রহণের এই পরিকল্পনা আগামী অর্থবছর থেকে কার্যকর করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের ৬০ ভাগই অভ্যন্তরীণ (ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র) খাত থেকে আসছে। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ কমিয়ে ১৬ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ওই পরিকল্পনাকে সামনে রেখে সঞ্চয়পত্র থেকে পর্যায়ক্রমে ঋণ কম নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। তার পরবর্তী বছরে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২৭ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নেয়া হবে ২৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। তাছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে আগামী অর্থবছরে নেয়া হবে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ। পরবর্তী দুই বছরে পর্যায়ক্রমে ঋণ নেয়া হবে ২ হাজার ৭৫০ কোটি এবং ২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমানোর মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় হ্রাস পাবে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ওই খাতে অন্তর্নিহিত সুদহার ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে কমে আসবে। আর মধ্যমেয়াদি অর্থাৎ আগামী ৩ বছরে সুদ ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার বিপরীতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সুদ বাবদ সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওই সুদ পরিশোধ ব্যয় কমিয়ে ২ হাজার ৫২০ কোটি টাকায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে সরকারের এমন পরিকল্পনার বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের অভিমত, বাজেট সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ নিলে সমস্যার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে ঋণ কী ধরনের তা দেখতে হবে। আর সেটি না হলে হয়তো মেগা প্রকল্পের জন্য ঋণ নেয়া হবে। তবে ভুলে গেলে চলবে না অভ্যন্তরীণ ঋণের অঙ্ক বিদেশি ঋণের চেয়েও বেশি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে স্বল্প সুদে ঢালাওভাবে বিদেশি ঋণ নেয়ার বিপক্ষে। আমি প্রকল্পভিত্তিক ঋণ নিতে চাই, যেখানে আমি নিজেই প্রকল্প শনাক্ত করব, ঋণদাতার চিহ্নিত প্রকল্পে না। কারণ দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু লোক ওসব ঋণদাতাকে ধরে নিয়ে আসে। তাদের উদ্দেশ্য থাকে। তবে এলডিসি থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসবে-এ বিবেচনায় ঋণ নেয়া হচ্ছে। তারপরও বলব, ঢালাওভাবে বিদেশি ঋণ নেয়ার পক্ষে নই আমি।