পাবনা প্রতিনিধি
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা গ্রামে একটি সনাতনী পরিবারের বসতবাড়ির জমি কিনে তার টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে। জমি বিক্রির টাকা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পরিবারটি। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও সুরাহা পাচ্ছেন না তারা।
এ বিষয়ে ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সেনা ক্যাম্প, ফরিদপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ভাঙ্গুড়া থানার ওসির কাছে লিখিত অভিযোগে দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষ্ট বন্ধু ঘোষ।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার মেজো ছেলে রবি ঘোষ ডেমরা গ্রামের বিভিন্ন মানুষের বাড়ি বাড়ি থেকে দুধ কিনে বাড়িতে ছানা ও ঘি তৈরী করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতো। কিন্তু তার সেই ব্যবসায় ক্ষতি হয়ে মোটা অংকের টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পরে পাওনাদারদের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বসতবাড়ির ৮ শতক জমিটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।
প্রতিবেশি ইসলাম প্রামানিকের কাছে জমি বিক্রি করতে রাজী হন কৃষ্ট বন্ধু ঘোষ। গত ৯ ডিসেম্বর ২১ লাখ ৫০০ টাকা মুল্যে ফরিদপুর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে ইসলামের নামে বসতবাড়ির ৮ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেন তিনি। এ সময় ডেমরা ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল রানা, ডেমরা গ্রামের তোরান মোল্লা, বাবু মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ওইদিন তারা জমি বিক্রির টাকা কৃষ্ট বন্ধু ঘোষের হাতে দেননি।
কৃষ্ট বন্ধু ঘোষ অভিযোগ করেন, তারা জমি বিক্রির টাকা আমাকে না দিয়ে বলে আমি নাকি টাকা খরচ করে ফেলবো, হারিয়ে যেতে পারে, কেউ টাকা কেড়ে নিতে পারে। এসব বলে পাওনাদারদের ঋণের টাকা তারা নিজেরাই পরিশোধ করবে এবং বাকি টাকা আমাকে দেবে বলে ডেমরা ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল রানা সেই ২১ লাখ টাকা নিয়ে তোরান মোল্লা ও বাবু মোল্লার কাছে জমা রাখেন।
কৃষ্ট বন্ধু ঘোষ আরো বলেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা টাকা আমাকেও দিচ্ছে না, আবার পাওনাদারদের ঋণের টাকাও শোধ করছে না। পাওনাদাররা প্রতিনিয়ত আমাদের বাড়িতে এসে নানারকম কথা শোনাচ্ছে। পরে তাদের কাছে টাকা চাইতে গেলে দেই দিচ্ছি বলে হয়রানী করছে। চেয়ারম্যানও কোনো ভূমিকা নিচ্ছেন না। প্রশাসনকেও জানিয়েছি, কিন্তু আমার জমি বিক্রির টাকা ফেরত পাচ্ছি না। উল্টো তারা বসতবাড়ি সরিয়ে জমি খালি করে দিতে একমাস সময় বেঁধে দিয়েছে। এমন অবস্থায় কোথায় যাবো, কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।
এ বিষয়ে জমি ক্রেতা ইসলাম প্রামানিক বলেন, জমি কিনেছি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে আর রেজিস্ট্রি করেছি ২১ লাখ টাকার। আমি সব টাকা দিয়ে দিয়েছি। তার মধ্যে এক লাখ টাকা কৃষ্ট বন্ধু নিজের হাতে নেন। আর বআকি ১৪ লাখ টাকা তিনি জুয়েল চেয়ারম্যানের কাছে দিতে বলেন। তখন চেয়ারম্যান টাকা না নিয়ে তার পরামর্শে সেই টাকা গ্রামের প্রধান তোরান মোল্লা ও বাবু মোল্লার কাছে জমা রাখা হয়।
গ্রাম্য প্রধান তোরান মোল্লা বলেন, আমাদের কাছে যে ১৪ লাখ টাকা জমা রাখা হয়েছিল সেই টাকা দিয়ে ১৫-১৬ জন পাওনাদারের টাকা আমরা পরিশোধ করেছি। আরো অনেকে টাকা পাবে তাদের কাছে। কৃষ্ট বন্ধু ঘোষের ঋণ প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। যারা এখনও টাকা পাননি তারাতো তাদের কাছে টাকা চাইবেই। যাদের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে তাদের সবার লিখিত স্ট্যাম্প আছে, সেগুলো থানায় জমা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল রানার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
পাবনার ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। তারা আসলে আলোচনা করে সব জানা যাবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সানাউল মোর্শেদ বলেন, সরকারি জমি হলে আমরা দেখি। যেহেতু এটি ব্যক্তিগত জমি কেনাবেচার বিষয়। সেক্ষেত্রে পুলিশ তার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর যদি জমি বিক্রেতা মনে করেন প্রতারণা বা অর্থ আত্মসাতের বিষয় তাহলে তিনি আদালতে মামলা করতে পারেন। তারপরও বিষয়টি ওসি সাহেবের সাথে কথা বলে দেখবো।