উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ও টানা বৃষ্টিতে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা এখন পানির নিচে ডুবছে। এর প্রভাবে পাবনার পদ্মা যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়া শুরু করেছে। দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটছে পাবনা জেলার নদী তীরবর্তী বসতীদের। যেকোনও সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে পানি। ইতোমধ্যে যমুনার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থা। পদ্মা যমুনা এলাকায় উঠতি ফসল ও সবজির খেত তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছে স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকেীশলী জাহিদ হোসেন বলেন, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীস্থ পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। যুমনা নদীর নগরবাড়ি পয়েন্টে ৯ দশমিক ০৩ সেন্টিমিটার অতিক্রম করছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই পদ্মা ও যুমনার বিভিন্ন পয়েন্টে ১/২ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকদিনের তুলনায় পদ্মা, চলনবিল, বড়াল, গুমানি, চিকনাইসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানির বিপদসীমার মাত্র ১ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নগরবাড়ি পয়েন্টে ০ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে পাবনার দুই পয়েন্টেই পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা ও যমুনা নদীতে আশঙ্কাজনক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীরবর্তী নিচু এলাকাতে কয়েকদিনের মধ্যে উঠতি নানা ধরনের শবজি ও ফসলের খেত ডুবে যেতে পারে। অনেকেই ইতোমধ্যে বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ঈশ্বরদীর চরকামালপুর, বিলকাদা, চরকুড়লিয়া, বেড়া অঞ্চলের নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের হাজারো বাসিন্দা নির্ঘুম দিন কাটাচ্ছে। পুর্বশ্রীকণ্ঠদিয়া, চরশাফুল্লা, সাঁথিয়ার নাগডেমরা ইউনিয়নে, সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় নদী ভাঙনের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের খলিলপুর, চরখলিলপুর এবং কালিকাপুর এলাকা, পাবনা সদরের আশুতোষপুর, বলরামপুর, রানীনগরে বেড়ার রূপপুর ও মাসুমদিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করার উপক্রম হয়েছে। ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়াঘাট এলাকার বাসিন্দা ফজলুল হক মাষ্টার বলেন, পদ্মার পানি দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়াতে আমরা নদীপাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি। সেইসঙ্গে আমাদের উঠতি সবজি খেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সরকারের পক্ষ থেকে এখন থেকেই সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহবান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখানে কয়েকদফা জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। তারপরও আমরা নদীবাঙনের আশঙ্কা করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাবনা কার্যালয়ের নিবাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, পদ্মা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫ মিটার নিচে অবস্থান করছে। তবে যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমা ছুঁইছুঁই অবস্থা। বেড়ার নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করার কাছাকাছি অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে নদী ভাঙন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বন্যা দেখা দিলে বা নদী ভাঙন শুরু হলে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্ধ দেওয়া হবে। পাবনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, সিলেট সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা বন্যার কবলে পরলেও আমাদের জেলাতে এখন পর্যন্ত কোথায় বন্যার প্রভাব দেখা যায়নি। বন্যা হলেও তেমন ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য জেলা ত্রাণ দপ্তর সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে রাখা হয়েছে। বিতরণের পক্রিয়া চলছে।