ইসলামে দাড়ি রাখা ওয়াজিব ও এটি অন্তত এক মুষ্ঠি পরিমাণ হওয়া আবশ্যক। দাড়ি রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। লম্বা দাড়ি রাখা সব নবীদেরই আমল ছিল। তাই এ আমলের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর, দাড়ি লম্বা রাখ এবং গোঁফ ছোট কর’। (বুখারি ৫৮৯৩, মুসলিম ৬০০)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, সেটি তার হৃদয়ের তাকওয়ার পরিচায়ক’। (সূরা: আল-হাজ, আয়াত: ৩২)
যদি চাকরির জন্য দাড়ি কাটতে বলে তাহলে আপনার কিছু করণীয় আছে। প্রথমে ধৈর্য ধারণ করুন। আপনার সমস্যার সম্মুখীন হওয়া আল্লাহর জন্য ধৈর্য প্রদর্শনের একটি পরীক্ষা।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন’। (সূরা: আল-আনফাল, আয়াত: ৪৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর কল্যাণ কাউকে প্রদান করা হয়নি’। (সহিহ বুখারি ১৭৪৫)
চাকরির জন্য দাড়ি শেভ করা শর্ত দিলে এ চাকুরী করবেন না। শাইখ ইবন বায (রহ.) বলেন, যদি কাউকে কোনো কোম্পানী বা মালিক এ শর্তে কাজ দেয় যে, দাড়ি শেভ করতে হবে, তাহলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এ দাড়ি শেভের শর্তে একমত না হয় এবং এ কাজ না নেয়। কেননা, রিজিকের বহু পথ রয়েছে, এ পথ বন্ধ নয়, বরং সর্বদা খোলা।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের বা বাঁচার পথ করে দেবেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিজিক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছে পূরণ করবেনই, অবশ্যই আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্রা। (সূরা: আত-ত্বালাক, আয়াত: ২-৩)
যেকোনো কাজে আল্লাহর নাফরমানী করতে হলে সে কাজে যোগদান করবেন না। অন্য যেকোনো হালাল কাজ তালাশ করুন। তাদের সঙ্গে আপনিও গুনাহ ও আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লংঘনে সহযোগিতা করবেন না। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নেক কাজ ও তাকওয়ায় পরস্পর সাহায্য করবে এবং গুনাহ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর’। (সূরা: আল-মায়েদাহ, আয়াত: ২)
মাজমু‘ ফাতাওয়ায়ে ইবন বাযের ১০ম খণ্ডে আরো রয়েছে, দাড়ি কামানো ও কাটা হারাম, কোনো মুসলিম এটা যেন না করে, আর এ কাজে যেন কেউ কাউকে সহযোগিতা না করে। দাড়ি মুণ্ডিয়ে বা শেভ করে টাকা উপার্জন করা হারাম। আর এটা হারাম খাওয়ার (রোজগারের) সমান। যে এমন কাজ করে সে যেন তাওবা করে এবং এ কাজটি না করে। অতীতে দাড়ি কেটে যা রোজগার করেছে তা যেন সদকা করে দেয়, যেহেতু সে জানতো না। আর ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক হয়ে যাও।
আল্লাহ তাআলা সুদখোরদের বা হারামখোরদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘অতএব, যার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হলো, তাহলে অতীতে যা হয়েছে তা তারই এবং তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় আরম্ভ করবে, তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে’। (সূরা: আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫)
অনেক মানুষ এ হারামটি করছে বলে আপনি যেন তাদের এমন কু-অভ্যাস দেখে প্রতারিত না হন।
তবে ইসলামি মূলনীতি মনে রাখবেন, ‘সৃষ্টির আনুগত্য তখনই বৈধ, যখন তা স্রষ্টার প্রতি অবাধ্যতা সৃষ্টি না করে’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অসৎকাজে কোনো আনুগত্য নেই; আনুগত্য কেবল সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে’। (সহিহ বুখারি: ৭১৪৫)
ইসলামি বিধান মেনে চলতে গিয়ে আপনাকে যেকোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হলে, সেটিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করুন। সঠিক পথ অনুসরণে দৃঢ় থাকুন, আল্লাহ আপনার জন্য উত্তম পথের ব্যবস্থা করবেন ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, চাকুরি পাওয়া কঠিন হয়, বা সহজে পাওয়া যায় না, তাহলে আপনি অতীব প্রয়োজন জরুরতের কারণে দাড়ি যতটুকু ছোট করতে বলেছে, ঠিক ততটুকুই করবেন, এর বেশি নয়। এ পথটি ‘আলেমগণ জায়েয রেখেছেন অতীব জরুরতের কারণে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যথাসাধ্য’। (সূরা: আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬)