আন্দোলন-সহিংসতার জেরে এক সপ্তাহের অচলাবস্থার পর রাজধানীর সড়কে কাজে ফিরেছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। সোমবার সকালে রাজধানীর বাংলা মোটর, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেইট এবং মহাখালীতে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো জায়গায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা এখনও আছেন। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় তাদের সংখ্যা কম। তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার স্নেহাশীষ দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রমনা-তেজগাঁও এলাকা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে এখানে প্রায় সর্বত্র ট্রাফিক পুলিশ কাজে নেমে গেছে। বিশেষ করে তেজগাঁও এলাকার কথা বলতে পারি যে, এখানে ৮০ শতাংশ ফোর্স নেমেছে। আমাদের উপস্থিতির পর শিক্ষার্থীরা বাসায় ফিরে যাচ্ছে। গত ৫ অগাস্ট আওয়ামীগের সরকারপতনের পর বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। তাতে অনেক পুলিশ সদস্য হতাহত হন, আতঙ্কে বেশিরভাগ থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। রাস্তা-ঘাটে থেকেও উধাও হয়ে যান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থায় রাজধানীসহ সারা দেশের সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। তখন সেই দায়িত্ব সামলাতে মাঠে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুলের উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থীদের। এই কদিন ঢাকার প্রায় সব রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দিনরাত ঘাম ঝরিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ কাজে তারা যাত্রীদের প্রশংসাও পেয়েছেন। অনেক সড়কে শিক্ষার্থীদের খাবার পানি, খাবার এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেক। পুলিশের অনুপস্থিতিতে যানজটের এই শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আনসার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদেরও কাজে লাগানো হয়। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশকে কাজে ফেরাতে উদ্যোগী হন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। সেজন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে তিনি রোববার বলেন, ওই সময়ের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে অনুপস্থিতরা আর ‘চাকরি করতে চাইছেন না’ বলে ধরে নেওয়া হবে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ও কাজলায় সোমবারও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, ধলপুরেও কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। সাধারণ সময়ে পুলিশের সঙ্গে গুলিস্তান যাত্রাবড়ী এলাকায় হানিফ ফ্লাইওভারের ইজারাদারের নিয়োজিত কর্মীরাও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করে। তারাও এখনো কাজে যোগ দেননি। তবে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান, সচিবালয়ের আশপাশের এলাকা পল্টন, প্রেসক্লাব ও উচ্চ আদালতের সামনে পুলিশ সদস্যদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করতে দেখা গেছে। রাস্তায় নেমে ট্রাফিক পুলিশের দেখা পাওয়ায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। শাহবাগে পথচারী মহামিলুল ইসলাম বলেন, “অনেকদিন পর রাস্তায় ট্রাফিক দেখে বেশ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে দেশে পুলিশ বলে কিছু আছে। এতদিন শুনতাম থানায় পুলিশ এসেছে, কিন্তু বাস্তবে দেখিনি। সকালেই পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম এক সঙ্গীকে নিয়ে বাইকে চড়ে তার এলাকায় রাস্তার পাশের দোকানে আসেন চা খেতে। তিনি বলেন, সকালেই বঙ্গবাজার, গুলিস্তান এলাকায় ট্রফিক পুলিশ দেখলাম। এতদিন শিক্ষার্থীদের অধীনে বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল। আমরা এবার একটা সত্যিকারের পরিবর্তন চাই। দুর্নীতি মুক্ত জনবান্ধন সরকার চাই।”