মোঃ সিয়াম ঃ পাবনায় কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই কৃষিজমি ও আবাসিক এলাকায় এমনকি স্কুলের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। এসব ইটভাটা প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করে চলছে। ইটভাটার আশপাশের জনবসতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনবহুল এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। অথচ স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে একেবারেই নীরব ভূমিকায়। জানা গেছে, পাবনা জেলায় ইটভাটা রয়েছে প্রায় দুশ। এর মধ্যে ৯০ ভাগের নেই পরিবেশের ছাড়পত্র। আবার বিদ্যমান ভাটার মধ্যে ৩০টিতে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হলেও বাকি সবগুলোতেই অবৈধভাবে খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলার ৯ উপজেলায় পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে চলছে অধিকাংশ ইটভাটা। সরেজমিন পরিদর্শন করে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনা সদর, বেড়া, ঈশ্বরদী এবং সাঁথিয়া উপজেলায় অবৈধ ভাটা চলছে সবচেয়ে বেশি। এসব অবৈধ ভাটার সঙ্গে জড়িত বা ভাটার মালিকের অধিকাংশই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী। এজন্য এরা সবসময়ই থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ ভাটার মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তাদের অবাধে ভাটা চালাতে সুযোগ করে দেন। এ সুযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা
কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই জেলার জনবসতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে এবং কৃষিজমি নষ্ট করে অবৈধ ইটভাটা গড়ে তুলে অবাধে ব্যবসা করছেন। পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর সিন্দুরীয়া গ্রামে প্রায় ৫০ বিঘার মতো ফসলি জমি দখল করে ৫টি ইটভাটা তৈরি করেছে প্রভাবশালীরা। এই ৫টি ইটভাটা হচ্ছে-মাস্টার্স ব্রিকস, সততা, সততা প্লাস, একতা ও মন্ডল ভাটা। এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে ইটভাটাগুলো বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালেও প্রশাসন দৃশ্যমান তেমন কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি বলে তারা অভিযোগ করেন। ইটভাটা নিয়ে উপজেলা থেকে জেলা পর্যন্ত প্রশাসনে রয়েছে ভয়াবহ সিন্ডিকেট-এমন অভিযোগও করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। জেলার সাঁথিয়া উপজেলায় আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় চলছে অবৈধ ইটভাটা। ভাটার কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা ও মাঠের ফসল। হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি। এসব ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। উপজেলার সেলন্দা, ধুলাউড়ি, পাটগাড়ী, কাশিনাথপুর, আতাইকুলা, সামান্যপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষিজমিতে, জনবসতি এলাকায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠেছে কমপক্ষে ৮টি ইটভাটা। উপজেলার সামান্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মেসার্স মাদারী সরদার ব্রিকফিল্ড (এমএসবি) নামে একটি ইটভাটা। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি বাতাসে উড়ে আসে। এতে শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। পাবনা সদর উপজেলায় রয়েছে কমপক্ষে ৫৫টি ইটভাটা। এর মধ্যে অধিকাংশের কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র বা সরকারি অনুমোদন নেই।