• Thu. Nov 21st, 2024

দৈনিক পাবনার আলো, মাহফুজ আলী কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত

#pabnaralo#, pabna# pabnanews# পাবনারআলো# পাবনার_আলো#পাবনারখবর#পাবনারবার্তা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকটি সড়কে বিক্ষোভ করায় ৫৭ বাংলাদেশি শ্রমিককে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে দেশটির আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত শ্রমিকদের জন্য এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ সরকার। সরকার যেন প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বা তারা যেন সাধারণ ক্ষমা পান, সেই উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।১৯ জুলাই আরব আমিরাতে যা ঘটেছে

গত ২৩ জুলাই বিবিসির অনলাইনে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, আসামিরা বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশ কয়েকটি রাস্তায় জড়ো হয়ে বড় আকারের মিছিল বের করে। সেদিন দেশটির পুলিশ তাদের সতর্ক করলেও বিক্ষোভকারীরা থামেনি। এ কারণে তাদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে বলেছে, টিকটক টুইটারে পোস্ট করা প্রতিবাদের ছয়টি ভিডিও তারা যাচাই করেছে। ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় আবুধাবি, আজমান, আল সাতওয়া ও ডাউনটাউন দুবাইয়ে প্রবাসীরা শান্তিপূর্ণ স্লোগান দিচ্ছেন এবং রাস্তায় নেমে মিছিল করেছেন।তারা বলছেন, প্রতিবাদকারীরা কেউই হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিলেন না বা তাদের দেওয়া স্লোগানে সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্য ভাষা ব্যবহার করেননি।

আরব আমিরাতের আইনে যা বলা আছে

সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও সভা-সমাবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। দেশটির দণ্ডবিধি, ২০২১ এর ২১২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যে সমস্ত ব্যক্তি দাঙ্গা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে মিছিল, মিটিং বা প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিবে, চেষ্টা করবে, অথবা উসকানি দেবে তাদেরকে এই আইন অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেবে আদালত।‘যে কোনো বাংলাদেশি প্রবাসে বিপদে পড়লে তারা কিন্তু আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখে। সেক্ষেত্রে আমাদের সরকার যেন আদালতে তাদের সহায়তা করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বা তারা যেন সাধারণ ক্ষমা পান।’ শরিফুল হাসান, সহযোগী পরিচালক, ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম

আরব আমিরাতের সাইবার অপরাধ আইনের ২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, উপরে উল্লেখিত অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে পরিকল্পনা, সংঘটন, উসকানি দিলে সেগুলো অপরাধ বলে গণ্য হবে।

যে শাস্তি পেয়েছেন বাংলাদেশিরা

গত ২০ জুলাই আরব আমিরাতের অ্যাটর্নি জেনারেল হাম্মাদ আলী শামসী যে বাংলাদেশিরা সেখানে দাঙ্গা করেছে এবং অন্যদের উসকানি দিয়েছে সে ঘটনার তদন্ত আহ্বান করেন। পরদিন আদালত তাদের বিচার করে এবং সাজা ঘোষণা করে।আমিরাতের সরকারি বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএমের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, ১৯ জুলাই বিক্ষোভ চলাকালে জড়ো হওয়া ও দাঙ্গায় উসকানির দায়ে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। কারাদণ্ড শেষে সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আদেশও দিয়েছেন আদালত।

আপিল ও সাধারণ ক্ষমার ব্যবস্থা করা

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে কোনো বাংলাদেশি প্রবাসে বিপদে পড়লে তারা কিন্তু আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখে। সেক্ষেত্রে আমাদের সরকার যেন আদালতে তাদের সহায়তা করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বা তারা যেন সাধারণ ক্ষমা পান। পাশাপাশি অভিবাসন নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এ ব্যাপারে সোচ্চার হয় তাহলে শ্রমিকরা আইনি সহায়তা পেতে পারে।’

‘এখন কিন্তু পৃথিবী বদলাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের বিক্ষোভ মিছিল বা যে কোনো আন্দোলনের বিষয়ে তাদের আইন-কানুন নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবার সুযোগ কিন্তু রয়েছে।’

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকদের তালিকা পেলে আমরা সহায়তা করতে পারতাম। প্রতিটি দেশের নিজস্ব আইন-কানুন আছে, সেখানে প্রতিটি নাগরিক ও বিদেশিদের সেই আইন মেনেই চলতে হয়। যারা গ্রেফতার হয়েছে, সাধারণ ক্ষমার ব্যবস্থার জন্য আমাদের দেশে তাদের দূতাবাসে চিঠি দেয় বা আইনিভাবে সহায়তা করে তাহলে হয়তো আরব আমিরাত সরকার বিবেচনা করতে পারে।’

‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ধরনের যত সংগঠন আছে তাদের মাধ্যমে আমরা দুবাই সরকারের কাছে আপিল করতে চাচ্ছি। আমরা এ প্রক্রিয়া শুরু করলে সরকারও হয়তো আগাবে।’- তাসনিম সিদ্দিকী, চেয়ারম্যান, রামরু

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠন রামরুর চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়টি শুনে আমরা খুবই মর্মাহত যে ১০-১২ বছর করে একেকজন শ্রমিককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মাইগ্রেশন নিয়ে কাজ করা আমাদের ২৩টি সংগঠন আছে। শিগগির আমাদের মিটিং আছে, সেখানে আমরা একটা পথ বের করব। আমরা একটা স্মারকলিপি তৈরি করব, যেখানে উল্লেখ করব, তারা আন্দোলন করে ফেলেছে, বিষয়টা বুঝে তারা করেনি। পুনর্বিবেচনার জন্য আমরা তাদের দূতাবাসে আপিল করব। শিগগির তাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করব, তারা যেন আমাদের এই প্রবাসীদের একটু অন্য চোখে দেখে।’

‘আরেকটি বিষয় হলো, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের যত সংগঠন আছে তাদের মাধ্যমে আমরা দুবাই সরকারের কাছে আপিল করতে চাচ্ছি। আমরা এ প্রক্রিয়া শুরু করলে সরকারও হয়তো আগাবে’ বলে মনে করেন তাসনিম সিদ্দিকী।

তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের সরকারও কিছু করতে পারে। প্রতিটি আইনি ব্যবস্থায় শুনানির অধিকার রয়েছে। এই যে রায়গুলো হয়েছে সেখানে প্রপার শুনানি হয়েছে কি না? তাই শ্রমিকদের অবস্থা বিবেচনা করে আবার আপিলের মাধ্যমে শুনানি করে এ রায়কে পুনর্বিবেচনা করার জোর দাবি জানাতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *