নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ চিকিৎসক, নার্স, সুইপার থেকে শুরু করে কোনো পদেই চাহিদা অনুযায়ী লোকবল নেই মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতালে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদ শূন্য। যেন নেই এর আবর্তে ঘুরছে পাবনা মানসিক হাসপাতাল। লোকবল সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে বার বার জানিয়েও আশানরুপ ফল মেলেনি। উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যও। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেসব সমস্যার সমাধান মেলেনি। তবে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় সংকট নিরসনের আশ্বাসে মানসিক হাসপাতালের সমস্যার দ্রুত সমাধানে প্রস্তাবনা তৈরী শুরু করেছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। রবিবার দুপুরে হাসপাতালে মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে এক জরুরী বৈঠকে হাসপাতালে চলমান নানা সংকট সম্পর্কে অবহিত হন সংসদ সদস্য প্রিন্স।
এ সময় হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ রতন কুমার পাল জানান, মানসিক হাসপাতালে সব সময়ই রোগীর চাপ থাকে। কিন্তু এখানে ৩১ জন ডাক্তারের পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ০৯ জন। মঞ্জুরিকৃত পদের ৬৪৩ পদের একটি বড় অংশই শূন্য। বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক, আবাসিক সাইক্রিয়াটিস্ট, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), অ্যানেসথেটিস্ট, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট, বায়োক্যামিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, এসএলপিপির মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে এ হাসপাতাল। ফলে জনবলের অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা। অবকাঠামোগত উন্নয়নও প্রয়োজন। রোগীর চাপ অনুপাতে শয্যা সংখ্যা কমপক্ষে ১০০০ এ উন্নীত করা প্রয়োজন।
শুধু তাই নয়, ৫০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২০০ শয্যার হাসপাতালের জনবল। ২০০ শয্যার জনবলের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী পদেও একই অবস্থা।
বৈঠক শেষে গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, মানসিক হাসপাতাল পাবনার গর্বের প্রতিষ্ঠান হলেও এখানে রোগীর অনুপাতে চিকিৎসক একদমই অপ্রতুল। অবকাঠামোগত ঘাটতিও রয়েছে। সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে আমি সংসদে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। খুব শীঘ্রই এগুলো সমাধান করা হবে বলে আশা করছি ।
১৯৫৭ সালে পাবনার সাবেক সিভিল সার্জন মোহাম্মদ হোসেন গাঙ্গুলি ‘শীতলাই হাউজ’ নামক জমিদার বাড়িতে অস্থায়ীভাবে মানসিক হাসপাতাল স্থাপন করেন। ১৯৫৯ সালে জেলা শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে হেমায়েতপুরে ১১২.২৫ একরের একটি চত্বরে হাসপাতালটি স্থানান্তরিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শয্যা সংখ্যা ছিল ৬০। ১৯৫৯ সালে ২০০, ১৯৬৬ সালে ৪০০ এবং ২০০০ সালে হাসপাতালটিকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। মোট শয্যার ২৮০টি নন-পেয়িং এবং ১২০টি পেয়িং আর প্রকল্পর অধীনে ১০০ শয্যা রয়েছে। হাসপাতালের মোট ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরুষদের জন্য ১৩ (১১টি নন-পেয়িং, দুটি পেয়িং) এবং নারীদের জন্য পাঁচটি (চারটি নন-পেয়িং, একটি পেয়িং) নির্দিষ্ট। তবে প্রতিষ্ঠার অর্ধ শতাব্দী পর জনসংখ্যা ও মানসিক রোগী আশংকাজনক হারে বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি হাসপাতালের শয্যা এবং চিকিৎসকের পদ।