গত ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম না হয়।
তিনি আরও বলেছিলেন-তদবির নয়, নীতিমালা অনুযায়ী যেসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত শর্ত পূরণ করবে, সেগুলোর সবই এমপিওর জন্য নির্বাচন করতে হবে। পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করে খসড়া তালিকা তার হাতে তুলে দিতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে ২৩০০ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার একটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার আবেদন যাচাই-বাছাই করে রোজার আগেই তা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। কথা ছিল, ঈদ উপহার হিসাবে রোজার মধ্যেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের এমপিওভুক্তি নিয়ে এক ধরনের টালবাহানা চলছে। ঘোষণা আসার কথা ছিল গত মার্চে। এরপর বলা হয় মে মাসে। এরই মধ্যে অর্থবছরের শেষ মাস জুন শুরু হয়েছে; কিন্তু এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বলা হচ্ছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা আসবে। যদি তা সম্ভব হয়ও, তারপরও চলতি অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, কোনো একটি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সেটির জনবলকে বেতন-ভাতা দিতে ৬-৭ মাস সময় লেগে যায়। এ অবস্থায় এ খাতে চলতি বছরে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত দিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।
প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে এত টালবাহানা কেন? নতুন নিয়ম অনুযায়ী তিনটি শর্ত পূরণ করলেই এমপিওভুক্ত হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে-শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সংখ্যা এবং পাশের হার। কথা হচ্ছে, এই তিন শর্ত পূরণ করেছে যেসব প্রতিষ্ঠান, সেগুলোর এমপিভুক্তিতে এত বিলম্ব কেন? বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বছরের পর বছর অর্থাভাবে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাবেন, এটা হতে পারে না। এমপিওভুক্তির ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ধীরগতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেছেন, তৈরিকৃত তালিকা চূড়ান্ত করে ঘোষণা দিতে আরও দুই সপ্তাহ লেগে যাবে।
আমাদের কথা হলো, তার কথামতো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যেন এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। এবার কথার বরখেলাপ হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে সদিচ্ছাই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমপিওভুক্তির প্রশ্নে অপেক্ষমাণ শিক্ষক-কর্মচারীদের দুর্ভোগ যেন আর প্রলম্বিত না হয়, আমরা সেটাই আশা করতে চাই।