• Thu. Oct 3rd, 2024

দৈনিক পাবনার আলো, মাহফুজ আলী কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত

#pabnaralo#, pabna# pabnanews# পাবনারআলো# পাবনার_আলো#পাবনারখবর#পাবনারবার্তা

বিপর্যয় ঠেকাতে বাকিটুকু রক্ষা করুন

বিগত ৩৪ বছরে অবিবেচকের মতো দেশের হাওরাঞ্চল বেপরোয়াভাবে ভরাট করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়নের নামে হাওরের প্রকৃতিই পাল্টে দেয়া হয়েছে। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ায় ব্যক্তিপর্যায়েও এ সময়ে হাওর ভরাট বেশি হয়েছে। হাওর অধিদফতরের তথ্য মতে, সারা দেশে মোট তিন হাজার ৬৯০টি বিল রয়েছে। এর মধ্যে প্লাবনভূমির বিল এক হাজার ৬২২টি ও হাওরাঞ্চলে দুই হাজার ৬৮টি। তবে এ তালিকার অনেক বিলের অস্তিত্ব এখন আর নেই। আবার অনেক বিল বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। হাওরাঞ্চল হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
লক্ষণীয়, হাওর ভরাট হওয়ায় দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বিশেষ করে ভয়াবহ বন্যাপ্রবণতা বেড়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় হাওর আছে। এবারের বন্যায় এসব হাওর এলাকার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোনায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে হাওরের গুরুত্ব প্রকৃতিগত। বৃষ্টি হলে হাওর এলাকা অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। একই সাথে হাওরের সাথে নদ-নদীর সংযোগ থাকায় প্রাকৃতিকভাবে হাওরের পানি নদীতে চলে যায়; কিন্তু গত কয়েক দশকে হাওর ভরাটের পাশাপাশি রাস্তাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে ওঠায় বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনার প্রাকৃতিক পদ্ধতি ধ্বংস করা হয়েছে। এমনিতেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আগের চেয়ে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক সব প্রতিবেদনও বলছে, সবচেয়ে বেশি পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে হাওরাঞ্চলের ভূমি ভরাট ওই বিপর্যয় আরো ত্বরান্বিত করবে, এটি বুঝতে কোনো বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
গত শুক্রবার প্রকাশিত ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) ও বুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ১৯৮৮ সালে হাওরের মোট আয়তন ছিল প্রায় তিন হাজার ৩৪ বর্গকিলোমিটার। ২০২০ সালে কমে তা হয়েছে প্রায় ৪০৬ বর্গকিলোমিটার। সে হিসাবে হাওর কমেছে ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এতে হাওরে বৃষ্টির পানি ধারণের মতা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ফলে এবার সিলেট বিভাগসহ আশপাশে বন্যার ভয়াবহতা দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি হাওর ভরাট হয়েছে ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল নাগাদ। এ সময়ে হাওর নিয়ে মহাপরিকল্পনা ছিল না, সরকারি তদারকিও ছিল না। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাওর শুধু আমাদের দেশের শস্য ও মৎস্যভান্ডার নয়, জীববৈচিত্র্যেরও কেন্দ্রস্থল। এ ছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শুষে নেয় হাওরাঞ্চল। তাই হাওর রা না করতে পারলে ব্যাপক পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দেবে। অবকাঠামোর মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী শাসন না করে, বন্যার সাথে কিভাবে বসবাস করা যায়, তার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নয়নের নামে হাওরাঞ্চল ভরাট করা অবিবেচনাপ্রসূত কাজ। হ্যাঁ, এটি ঠিক যে, দেশে জমির স্বল্পতা আছে, যোগাযোগব্যবস্থাও উন্নয়নের প্রয়োজন। তবে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জলবায়ু বিবেচনায় নিয়ে এ উন্নয়ন করতে হবে। না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না।
পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতো আমরাও মনে করি, হাওর ও জলাভূমি ‘উন্নয়নে’র চেয়ে সংরণই বেশি জরুরি। হাওর ও জলাভূমি সংরণের বদলে উন্নয়নের দর্শন নিয়ে এগোলে পরিণামে আগামীতে দেশে বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপক ক্ষতির মহা আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাওরের বাকি অংশটুকু রা করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এটি যেহেতু কারো কাম্য নয়, তাই এখনই হাওরের বাকি অংশ সংরক্ষণে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *