• Fri. Oct 4th, 2024

দৈনিক পাবনার আলো, মাহফুজ আলী কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত

#pabnaralo#, pabna# pabnanews# পাবনারআলো# পাবনার_আলো#পাবনারখবর#পাবনারবার্তা

বানভাসিদের সীমাহীন দুর্ভোগ সাহায্যে এগিয়ে আসুন সবাই

সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তবে সারা দেশে বন্যা উপদ্রুত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে। চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি এবং বন্যাজনিত দুর্ভোগ দীর্ঘ হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি এখনো বাড়ছে। অনেক জেলায় বড় নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ভাঙনের তীব্রতা শুরু হয়েছে।
টানা ভারী বর্ষণের সাথে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি সিলেট, সুনামগঞ্জকে ডুবিয়ে এখন নেত্রকোনা জেলাজুড়ে জেঁকে বসেছে। সিলেটে গতকাল সকালেও ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। সূর্যের দেখা মেলেনি। গত রোববার দিনে কম হলেও সোমবার বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল। আশার কথা, গতকাল সিলেটে নদ-নদীর পানি কমেছে।
উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়ায় কারোরই দুর্যোগ মোকাবেলার পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। শহরাঞ্চলের পরিস্থিতি কিছুটা জানা গেলেও, গ্রামাঞ্চলের বন্যাদুর্গতদের প্রকৃত অবস্থা কী, তা নিয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বন্যার আকস্মিকতা ও ভয়াবহতা এত বিস্তৃত ও ভয়াবহ যে স্থানীয় প্রশাসনকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সারা দেশের বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রায় অর্ধকোটি বানভাসি মানুষ রয়েছেন মহাদুর্ভোগে। এ দিকে হাটবাজার, দোকানপাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাজার থেকে চাল, ডাল, তেলের মতো নিত্যপণ্য কিনতে পারবে, এমন অবস্থাও নেই। সড়ক-রেলযোগাযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ বিভিন্ন পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের সব এলাকা এবং সিলেটের অনেক এলাকা কার্যত সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে চলমান দুর্যোগের প্রভাব অনেক গভীর ও বহুমাত্রিক।
বানভাসিদের ঘরবাড়ি থেকেও নিজের বসতভিটায় বসবাসের উপায় নেই। খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই। লাখ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশুর দুর্দশা দেখারও কেউ নেই। আশ্রয়কেন্দ্রেও খাদ্যসহ নানা সঙ্কট। দুর্গত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের বাইরে। এ এক দুর্বিষহ পরিস্থিতি। কত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা অনিশ্চিত। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে জমির ফসলসহ সব অবকাঠামো। হাটবাজার, দোকানপাট, ব্যাংকসহ জনজীবনের স্বাভাবিক সব কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। হাসপাতালেও ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ফলে পানিবন্দী মানুষের মধ্যে হাহাকার ও আর্তনাদ চলছে।
পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ যে, এ মুহূর্তে সচ্ছল-অসচ্ছল বিপুলসংখ্যক মানুষের জরুরি খাদ্যসহায়তা, বিশেষ করে রান্না করা খাবার, চিঁড়া-গুড়ের মতো শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। উপদ্রুত এলাকায় বিপুল পরিমাণ খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও মোমবাতির প্রয়োজন। অসুস্থ জন ও প্রসূতিদের বিশেষ চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন।
সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত জনপদে ত্রাণ বিতরণ চললেও বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রম সুসমন্বিত নয়। সরকারিভাবে যা-ও বা ত্রাণকার্যক্রম চলছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নৌযান সঙ্কটে নানা স্থানে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। বন্যার কারণে নৌপথ ছাড়া যোগাযোগের আর কোনো বিকল্পও নেই। কিন্তু নৌকাস্বল্পতায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা এবং লোকজনের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ভয়াবহ এ দুর্যোগে লাখ লাখ মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া এবং তাদের খাবার ও বিশুদ্ধ পানি জোগানো, চিকিৎসাসেবা দেয়াই এখন মুখ্য।
এত বড় দুর্যোগ মোকাবেলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি। সঙ্গত কারণে সরকারি-বেসরকারিসহ সচ্ছল ব্যক্তিবর্গ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মিলিতভাবে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় সৃষ্ট বিপর্যয় আমাদের জাতীয়ভাবে সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে তাদের পাশে আন্তরিকতা ও দরদভরা মন নিয়ে দাঁড়াতে হবে। তখনই কেবল সম্ভব এই বিপর্যয় কাটিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আবার ঘুরে দাঁড়ানো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *