• Fri. Oct 11th, 2024

দৈনিক পাবনার আলো, মাহফুজ আলী কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত

#pabnaralo#, pabna# pabnanews# পাবনারআলো# পাবনার_আলো#পাবনারখবর#পাবনারবার্তা

প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় মিয়ানমার ॥ আস্থা নেই ঢাকার

ডেস্ক নিউজ ॥ সীমিত আকারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় মিয়ানমার। এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস মিলেছে দেশটির কাছ থেকে। বাংলাদেশও চায় চলতি বছরেই (২০২২ সাল) প্রত্যাবাসন শুরু হোক। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতায় নেপিডোর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না ঢাকা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের পঞ্চম সভা থেকে এমন তথ্য মিলেছে। মঙ্গলবার (১৪ জুন) রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে ঢাকা-নেপিডো। মিয়ানমারে অং সান সু চি’র সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর অর্থাৎ দেড় বছরের বেশি সময় পর সামরিক জান্তা সমর্থিত সরকারের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে নেপিডোর পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব উ চান আয়।
মিয়ানমারে অং সান সু চি’র সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর অর্থাৎ দেড় বছরের বেশি সময় পর সামরিক জান্তা সমর্থিত সরকারের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে নেপিডোর পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব উ চান আয়
সচিব পর্যায়ের এ বৈঠক নিয়ে এখনই মুখ খুলতে রাজি নন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ এ বছর প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। বৈঠকে এমনটাই আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অনেক দিন পর দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে এবং আগামী দিনে এটি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান পররাষ্ট্রসচিব।
বৈঠক নিয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোর বার্তা বলছে, প্রত্যাবাসনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার। ছোট আকারে হলেও তারা প্রত্যাবাসন চায়। এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরও কাজ করবে দেশটি। এক্ষেত্রে আসিয়ান ও জাতিসংঘের সহায়তা নিতেও রাজি আছে তারা। বাংলাদেশও প্রত্যাবাসন শুরু করতে রাজি হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব কারণে প্রত্যাবাসন করা যাচ্ছে না সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পুরোনো বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসন, পুরো পরিবার বা এলাকা ধরে নেওয়া। এছাড়া মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের রাজি করাতে হবে। এতেও রাজি হয়েছে মিয়ানমার।
তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখতে না পারার বিষয়টিও অবগত করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে রাজি হয়েছে দেশটি। তবে কবে নাগাদ প্রতিনিধি দল পাঠাবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।
জানা যায়, সভায় ঢাকার পাঠানো আট লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে শতকরা সাত ভাগের চেয়ে কিছু বেশি রোহিঙ্গার বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে মতামত দিয়েছে নেপিডো। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন বা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করার ওপর জোর দিয়েছে ঢাকা। নেপিডোকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অ্যাড-হক টাস্কফোর্সের বৈঠকে এ বিষয়ে দেশটি কথা দিলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। নেপিডো বলছে, অনেকের নামের বানান ভুল রয়েছে বা ছবি মিলছে না। তার ব্যাখ্যায় ঢাকা জাতিসংঘের ডাটাবেস দেখার পরামর্শ দিয়েছে।
বৈঠক নিয়ে এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করেছে উভয়পক্ষ। দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু, রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন বা যাচাই-বাছাই দ্রুত নিষ্পত্তি করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ ও টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক নিয়মিতভাবে করার বিষয়ে একমত হয়েছে ঢাকা-নেপিডো।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০১৯ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল পরের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে। কিন্তু ওই মাসের শুরুতেই মিযানমারে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। মিয়ানমারে অং সান সু চি’র সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। এরপর ওই বছর আর আলোচনার টেবিলে বসতে পারেনি ঢাকা-নেপিডো।
দীর্ঘ এক বছর পর চলতি বছরের শুরুর দিকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে দুই দেশ। অ্যাড-হক টাস্কফোর্সের ওই বৈঠকই ছিল সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর টেকনিক্যাল কমিটি পর্যায়ে দুই দেশের প্রথম বৈঠক। আজকের (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত বৈঠকের মধ্য দিয়ে তিন বছর পর অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখের অধিক রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
২০১৮ সালের নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ ব্যর্থ হ। ওই সময় রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *