জেলা প্রতিনিধি, পাবনা
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধভাবে অযোগ্য এক প্রার্থীকে প্রভাষক পদে নিয়োগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে। অবিলম্বে নিয়োগের সুপারিশ বাতিলের দাবি জানান তারা।
সূত্র জানায়, গত ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেখানে এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্টের বিষয়ে কোন শর্ত উল্লেখ করা ছিল না। তবে ১৫ই এপ্রিল ২০২৩ তারিখে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে এসএসসি, এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ এবং স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তরে ৩.৫০ আবেদনের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে উপর্যুক্ত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে গত ১১ জানুয়ারি ২০২২ ইং তারিখের পাবিপ্রবি/সংস্থাপন/২৮২/৫৯ স্মারকমূলে প্রকাশিত বিভাগের পদসমূহে ইতোপূর্বে যারা আবেদন করেছেন, তাঁদের পুনরায় আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তবে কোন প্রার্থীর যদি উক্ত আবেদনে প্রেরিত তথ্যাদি আপডেট করার প্রয়োজন হয়, তবে তাঁর আপডেটেড তথ্যসহ ০৮(আট) সেট আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার প্রয়োজন হবে না।
দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শর্ত পুরন না হলে প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে যারা আবেদন করেছিল তাদের আবেদন অটোমেটিক বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আবেদন বাতিল না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবৈধভাবে নিয়োগের পাঁয়তারা করছে।
মোট ৬৬জন প্রার্থী আবেদন করে, যার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ রেজাল্টধারী প্রার্থী দয়াল চন্দ্র রায় (যার এসএসসির রেজাল্ট ৩.৭৫) নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম আগে থেকেই উপাচার্য হাফিজা খাতুনের সঙ্গে পরিকল্পনা করে দয়াল চন্দ্র রায়ের নিয়োগ পাকাপাকি করেন। তাই আবেদনের প্রাথমিক শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও প্লানিং কমিটিতে তার প্রার্থিতা বাতিল না করে নিয়োগ পরীক্ষার কার্ড প্রেরণ করা হয় এবং নাম মাত্র পরীক্ষার আয়োজন করে তাকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
নিয়োগ সম্পর্কিত একাধিক সূত্র জানায়, উপাচার্য কর্তৃক আগে থেকেই তৈরি করা প্রশ্নে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা গ্রহণে অনুরোধ করে এই প্রার্থীকে বাছাই করা হয়। এরপর গত ২৯ মার্চ নিয়োগবোর্ড বসে। এরপর ২রা এপ্রিল ২০২৪তারিখে রিজেন্ট বোর্ডে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চাকরিপ্রার্থী জানান, আমাদের সব বিষয়ে যোগ্যতা পরিপূর্ণ থাকার পরও নিয়োগের সুপারিশ পাইনি। অথচ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অযোগ্য এক প্রার্থীকে নিয়োগ দিচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী চাকরির সুপারিশপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তির আবেদনই বাতিল হওয়ার কথা। অযোগ্য ওই প্রার্থীর নিয়োগের সুপারিশ বাতিলের দাবি জানাই। সেই সঙ্গে যারা এই অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এত যোগ্য প্রার্থী থাকতে কেন আবেদনের প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে না পারা অযোগ্য প্রার্থীকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হলো জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম বলেন, ‘সবকিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে।’ বিজ্ঞপ্তিতে ন্যুনতম যোগ্যতা ৪.০০ চাওয়া হলেও এসএসসিতে ৩,৭৫ পাওয়া দয়াল চন্দ্র রায়ের নিয়োগ কীভাবে নিয়ম মেনে হলো, এ প্রশ্নের তিনি সদুত্তর দিতে পারেন নি। কত টাকা লেনদেন হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি রেগে ওঠেন এবং ফোন কেটে দেন।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হাফিজা খাতুন বলেন, ‘ আমি টেলিফোনে কোন জবাব দিতে পারব না। অফিসে আসেন পিআরও সেকশন আছে ওখানে কথা বলেন। এরপর রেগে ফোন কেটে দেন।
উল্লেখ্য, অনিয়মই যেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, শিক্ষক নিয়োগ সবক্ষেত্রেই চলছে অনিয়ম। এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা সদলবলে লিফট ক্রয়ে তুরস্কে যাওয়ার আয়োজন করলে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়। সম্প্রতি উপ-উপাচার্য এস এম মোস্তফা কামাল ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তা প্রতিকার করতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করেন।