গত ০৫ জুন ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনে সরকার প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সমুদ্র প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, সমুদ্রসম্পদ আহরণ, টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে উন্নয়নের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার ব্লু-ইকোনমি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা ইতিবাচক। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ণ এবং সম্পদের অতি ব্যবহারের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশ আজ অনেকটাই বিপর্যস্ত। মানবসৃষ্ট কারণে পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায় দূষণকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
আমরা লক্ষ করছি, পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বস্তুত নানারকম দূষণের কারণে বদলে যাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এ কারণে নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। জানা যায়, দূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে। একই সঙ্গে অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে; ঝুঁকিতে আছে আরও অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। আমরা যদি আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাই, তাহলে এমন কোনো কাজ করা যাবে না যার কারণে প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, শিল্পোন্নত দেশগুলোর কারণে দ্রুত বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে। ফলে বিশ্বে বাড়ছে ঝড়, খরা, বন্যাসহ নানারকম দুর্যোগ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সামুদ্রিক ঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ছে। এতে উন্নত দেশের তুলনায় কম উন্নত দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সামুদ্রিক ঝড়, বন্যা-এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের দেশের মানুষ অতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই।
আমাদের এই গ্রহকে সুরক্ষার জন্য প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের দেশের পরিবেশ সুরক্ষায় সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দুঃখজনক হলো, দেশের পরিবেশ সুরক্ষায় মানুষ উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রতিদিন যে সংখ্যক পলি ব্যাগের বর্জ্য জমা হয়-এটি বিবেচনায় নিলেই স্পষ্ট দেশবাসী পরিবেশ সুরক্ষায় কতটা উদাসীন। এক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষায় দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বর্তমানে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এতটাই চরম আকার ধারণ করেছে যে, সরিষার ভূত তাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে প্রতি বর্ষাতেই জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে। পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের টেকসই উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।