• Fri. Oct 11th, 2024

দৈনিক পাবনার আলো, মাহফুজ আলী কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত

#pabnaralo#, pabna# pabnanews# পাবনারআলো# পাবনার_আলো#পাবনারখবর#পাবনারবার্তা

দেশে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু কমানো চাই প্রযুক্তির ব্যবহারসহ সচেতনতা

সারা বিশ্বে বজ্রপাতে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনায় এক হাজার আট শতাধিক মানুষ মারা গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মানুষ মারা যাওয়ার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যায়, যদিও দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা কমেছে; মৃত্যুর সংখ্যাও কিছুটা কমেছে। তবু উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান হয়নি। এখনো বছরে প্রায় দেড় শ’ মানুষের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে। উদ্বেগজনক পরিস্থিতির যে অবসান হয়নি, তার নমুনা পাওয়া যায় নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়েছে- দেশের বিভিন্ন স্থানে গত শুক্রবার বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বজ্রপাতের ধরন হলো- সকালের দিকে প্রচন্ড তাপমাত্রা হয়। আর তখন এটি অনেক জলীয় বাষ্প তৈরি করে। এ জলীয় বাষ্পই বজ্র ঝড় ও বজ্রপাতের প্রধান শক্তি। তাপমাত্রা যত বাড়বে তখন জলীয় বাষ্প বা এ ধরনের শক্তিও তত বাড়বে। জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া মানেই হলো ঝড়ের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া। বছরে এক ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ১২ শতাংশ বজ্রঝড় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
দেশে আগের চেয়ে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি বলে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা মনে করেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। এর কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ায়। বাংলাদেশে দশমিক ৭৪ শতাংশ তাপমাত্রা বেড়েছে। দেশে এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে এবং হাওর এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয়। সবচেয়ে বেশি হয় সুনামগঞ্জে আর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। সুনামগঞ্জে বজ্রপাত বেশি হলেও মানুষ মারা যায় উত্তরাঞ্চলে। বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭০ শতাংশ ঘটনাই ঘটে কৃষিকাজ করার সময়। তাই মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষক। এ ছাড়া বাড়ি ফেরার পথে সাড়ে ১৪ শতাংশ এবং গোসল করা ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতের ক্ষেত্রে একটি অস্বাভাবিক বছর ছিল ২০১৬ সাল। ওই বছর বজ্রপাতে মারা যায় ২৬৩ জন মানুষ।
বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা দেশের হাওরাঞ্চল। সেখানে বেশির ভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ নেই। অথচ বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। বৃক্ষহীন হাওর এলাকায় কৃষকের শরীরই মাটির চেয়ে উঁচু থাকে। অবশ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে বজ্রপাত প্রতিরোধে সারা দেশে প্রায় ১৩ লাখ তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেসবের কয়টি টিকে আছে, সেগুলো কী ভূমিকা রেখেছে এর কোনো পর্যালোচনা হয়েছে বলে জানা যায়নি।
বজ্রপাত প্রকৃতির একটি বিষয় এবং এটি হবেই। তবে এতে প্রাণহানি কমানোর সুযোগ আছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, শহরে বজ্রপাত প্রতিরোধে বেশির ভাগ ভবনে প্রতিরোধক দন্ড রয়েছে। ফলে শহরে মানুষের মৃত্যু কম। কিন্তু গ্রামে, বিশেষ করে ফসলের মাঠে সেই ব্যবস্থা নেই। এ কারণে সেখানে মৃত্যু বেশি হয়।
সীমিত পরিসরে বজ্রপাত সম্পর্কিত পুস্তিকা ও প্রকাশপত্র এবং সেমিনার আয়োজন করার মধ্য দিয়েই সরকারি দায়িত্ব পালন সীমাবদ্ধ রয়েছে। প্রতিটি দুর্যোগে একটি নির্দিষ্ট সময় আছে এবং সে সম্পর্কে প্রতিটি মানুষকে সচেতন করা উচিত। বাইরে থাকলে যখন দেখা যাবে আকাশ কালো হয়ে আসছে তখনই নিরাপদ জায়গায় যেতে হবে। তালগাছের মতো গাছগুলো রোপণ করা উচিত খোলা মাঠে। সঙ্গত কারণে বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, সময় ও এলাকা বিবেচনায় নিয়ে বজ্রপাত ব্যবস্থাপনায় বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও বজ্রপাত-নিরোধক স্থাপনের মাধ্যমে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব। কাজটি সরকারকেই করতে হবে। তবে বেশি দরকার সচেতনতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *