• Wed. Oct 9th, 2024

দৈনিক পাবনার আলো, মাহফুজ আলী কাদেরী কর্তৃক সম্পাদিত

#pabnaralo#, pabna# pabnanews# পাবনারআলো# পাবনার_আলো#পাবনারখবর#পাবনারবার্তা

খাল দখল করে পাকা ভবন।

১১-০৭-২০২৩

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাড়ের খাল দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। সম্প্রতি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বৃলাহিড়ীবাড়ী ইউনিয়নের এরশাদনগর হাটে

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাড়ের খাল দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। সম্প্রতি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বৃলাহিড়ীবাড়ী ইউনিয়নের এরশাদনগর হাটেছবি: প্রথম আলো

পাবনার ফরিদপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাড়ের খাল দখল করে ধানের চাতাল করেছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। পাশেই তিনতলা পাকা ভবন তুলছেন এক ব্যবসায়ী। আর সামনের গুমানী নদীর পাড় দখল করে ভবন তুলছেন আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী। উপজেলার বৃলাহিড়ীবাড়ী ইউনিয়নের এরশাদনগর বাজার এলাকায় দখলের এই মহা উৎসব শুরু হয়েছে।

খাল দখল করে ধানের চাতাল করেছেন ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকির হোসেন। আর ভবন তৈরি করছেন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে গুমানী নদীর পাড়ে ভবন তৈরি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার আক্তার, বাচ্চু হোসেন, আসলাম প্রামাণিক ও প্লাবন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশির দশকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী থেকে রাজশাহীর চারঘাট পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। বাঁধটি তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বাঁধের পাশের জমি থেকে মাটি কেটে তৈরি হয় বাঁধ। এর কিছুদিন পর থেকেই বাঁধের পাড় ও খাল দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ কাঁচা ঘর তুলে বাঁধের পাড়ে বসবাস শুরু করেন। একই সঙ্গে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল আধা পাকা দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দিতে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় খালের একাংশ ভরাট করে ধানের চাতাল করেন আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন। আর ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম একটি টিনশেড দোকানঘর তুলে ভাড়া দেন। গত বছর দোকানঘরটি আগুনে পুড়ে যায়। দুই মাস আগে তিনি সেখানে আরসিসি ভিত দিয়ে তিনতলা ভবন তৈরির কাজ শুরু করেন।

খালপাড়ের এই দখলদারদের দেখে উৎসাহিত হন সামনের নদীপাড়ের ব্যবসায়ীরা। নদীর পাড় দখল করে তাঁরাও পাকা ভবন তৈরি শুরু করেন। একে একে ব্যবসায়ী আনোয়ার আক্তার, বাচ্চু হোসেন, আসলাম প্রামাণিক ও প্লাবন ভবন তৈরি করে ভাড়া দেন।

ভাঙ্গুড়া উপজেলার নৌবাড়িয়া চাররাস্তা মোড় থেকে ফরিদপুরের দিকে গেছে এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। নৌবাড়িয়া থেকে বাঁধ ধরে প্রায় চার কিলোমিটার গেলে ফরিদপুরের এরশাদনগর বাজার। বাঁধের এক পাশে চলনবিল, অন্য পাশে পাউবোর খাল।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, খালপাড়ে কাঁচা ঘর তুলে বসবাস করছে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ। এরশাদনগর বাজারে নির্মাণ হচ্ছে সব পাকা ভবন। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খালে প্রায় ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রশস্ত এলাকা দখল করে তিনতলা ভবনটির কাজ চলছে। আর একটু এগুলো বিশাল ধানের চাতাল। আর সামনের গুমানী নদীর পাড়ে লাইন ধরে উঠছে আরও চারটি ভবন।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন ধানের চাতাল তৈরি দিয়েই খাল দখলদারির শুরু। এরপর অনেকে প্রভাব খাটিয়ে কাঁচা-পাকা ঘর তুলেছেন। এখন তৈরি হচ্ছে পাকা ভবন। পাউবোও কোনো খোঁজ খবর নেয় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এরশাদনগর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আগে টিনের ঘর ছিল, এহন পাকা দালান হচ্ছে। কুনু কিছুই দেখার কেউ নাই।’

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে এই জায়গায় দোকান নির্মাণ করে ভোগদখল করেছি। আমার জায়গায় আমি ভবন নির্মাণ করছি। পাউবোর লোকজন বিষয়টা জানেন। তাঁদের অনুমতি নিয়েই কাজ করছি।’

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী রাজীব হোসেন বলেন, ‘জাকির হোসেন মাছ চাষের জন্য খাল লিজ (ইজারা) নিয়েছিলেন। এরপর অবৈধভাবেই ধানের চাতাল করেছেন। অন্যদিকে ভবনটিও অবৈধভাবে উঠছে। আমরা একবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আবার কাজ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পাউবোর জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাড়ে খাল দখল করে কোনো স্থাপনা তৈরির সুযোগ নেই। নদীর পাড় দখলেরও সুযোগ নেই। খুব শিগগির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নির্মাণকাজ বন্ধ করা হবে। একই সঙ্গে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *